সুনামগঞ্জ , বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যেন ডোবা-নালা তাহিরপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০ র‌্যাবের অভিযানে ভারতীয় ২৭২ বোতল মদ জব্দ যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে তারা দেশের শত্রু : কয়ছর এম আহমদ প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত : কয়ছর এম আহমদ বিশ্বম্ভরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত শান্তিগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০ দেশ যেন মৌলবাদের অভয়ারণ্য না হয় : তারেক রহমান সত্যশব্দের বর্ষার আয়োজন ‘বাদল গেছে টুটি’ দিরাই থানা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ইউকের ফ্যামিলি গ্যাদারিং অনুষ্ঠিত জনগণের ভোগান্তি কমিয়ে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে : কয়ছর এম আহমেদ জামালগঞ্জে উড়ালসড়ক প্রকল্প পরিদর্শনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা তাহিরপুরে তোপের মুখে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শান্তিগঞ্জে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা জাতি-ধর্মে ভেদাভেদ থাকবে না, এই দেশ সবার : সেনাপ্রধান বর্ণাঢ্য আয়োজনে জন্মাষ্টমী উদযাপিত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেনের কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবি সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদের ‘সাহিত্য আড্ডা’ অনুষ্ঠিত

হাওরে কমছে দেশি ধান চাষ

  • আপলোড সময় : ১৯-০১-২০২৫ ১২:২১:৩১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-০১-২০২৫ ০৮:১৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
হাওরে কমছে দেশি ধান চাষ
শামস শামীম :: পল্লী কবি জসীম উদদীন ‘ধানক্ষেত’ কবিতায় ধান-কে জীবনের আশা-নিরাশার প্রতীক রূপে দেখেছেন। ‘পথের কেনারে দাঁড়ায়ে রয়েছে আমার ধানের ক্ষেত / আমার বুকের আশা-নিরাশার বেদনার সঙ্গেত / বকের মেয়েরা গাঁথিয়া যতনে শ্বেত পালকের মালা / চারিধারে এর ঘুরিয়া ঘুরিয়া সাজায় সোনার ডালা...। হাওর-ভাটির লাখো কৃষকের কাছেও ধান- বেঁচে থাকার আরেক নাম। উত্তরাধিকার পরম্পরায় ধান চাষবাসে জীবনের চাকা সচল রেখেছেন কৃষকরা। কিন্তু হাওরভাটির প্রাণ, প্রকৃতি, প্রোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও লোকায়ত জীবনের প্রতিনিধিত্বকারী দেশি ধান চাষ ক্রমশ কমছেই। প্রবীণদের বয়ানে হারিয়ে যাওয়া দেশি ধানের সেই আফসোসই লক্ষ করা গেছে। কৃষকরা আশঙ্কার কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, হাওরে চলতি বোরো মওসুমে মাত্র ০.০৫ ভাগ দেশি বোরো ধান আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে উফশী ও হাইব্রীড। বহুজাতিক কোম্পানি বাজারজাতকৃত হাইব্রীড ধান চাষ হাওরে ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত কমছে রোগপ্রতিরোধ ও পুষ্টিগুণ ক্ষমতাসম্পন্ন সুগন্ধি দেশি ধান চাষ। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড ৩০ ভাগ, উফশী ৬৯.০৫ ভাগ এবং দেশিয় প্রজাতির বোরো ধান মাত্র ০.০৫ ভাগ। ইতোমধ্যে গড়ে ৮০ ভাগ জমিতে বোরো ধান লাগানো হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের মতে, হাওরে ৯১ ভাগ এবং নন হাওরে ২৫ ভাগ জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ১৫ পর্যন্ত বোরো আবাদ করা যাবে। কৃষি বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বহুজাতিক কোম্পানির বাজারজাতকৃত হাইব্রীড ধান চাষ হাওরে চাষবাস বাড়ছেই। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে স্থানীয় জাতের ধান প্রায় ১১০০ হেক্টর আবাদ হয়েছিল। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে মাত্র ৭শ হেক্টর চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ওই সময়ে স্থানীয় জাতের ধান প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছিল। কিন্তু এক যুগের ব্যবধানে অযুতের কোটা থেকে শতকে নেমে এসেছে দেশি ধান চাষ। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, এক সময় সুনামগঞ্জের হাওর-বাঁওরসহ জলাভূমিতে প্রায় ২২৮ প্রজাতির দেশি বোরো ধান চাষ হতো। স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতো এসব দেশি প্রজাতির ধান। জগলি বোরো, ঝরাবাদল, বাঁশফুল, বর্ণজিরা, তুলসীমালা, গাজী, জোয়ালকোট, মধুমাধব, খাসিয়া বিন্নি, হলিনদামেথি, দুধজ্বর নানা দেশিয় বাহারি নামের ধানের স্মৃতি এখনো প্রবীণদের স্মৃতিতে তরতাজা। হাওরের কৃষকরা জানান, বাজারে অন্য ধানের চালের চেয়ে এই ধানের চালের মূল্যও দ্বিগুণ এবং পুষ্টিগুণও বেশি এবং খেতেও সুস্বাদু। তাছাড়া এসব দেশি ধানের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, বন্যাঝুঁকিমুক্ত এবং চাষবাসে ব্যয়ও কম হয়ে থাকে। গরিব চাষীর বদলে এই ধানের চালের ক্রেতারা এখন বড়লোকেরা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাওরের কৃষকদের মতে হাওরাঞ্চলে একসময় লতাটেপি, বাঁশফুল, বিচিবিরই, বানাজিরা, সাধু টেপি, রংগিলা, নলবিরণ, সোনা রাতা, খইয়া, রাতা, কন্দী বোরো, জগলি বোরো, গচি, বোনাভাতা, লিচুবিরন, কইয়া বোরো, চন্দ্রী, সাধু, গাচমল, মাশিন, তুলসীমালা, গই বিশাল, ঠাকরি, লতা বোরো, লালটেপি, গিজাবিরো, বিকিন, গজারি, বর্ণজিরা, কচুশাইল, আসান, অসিম, বিদিন, ফটকা, কাউলি, তায়েফ, রায়েন, বইয়াখাউরি, বেগমপেঁচিসহ বাহারি নামের দেশি প্রজাতির বোরো ধান চাষ হতো। শুধু বোরো মওসুমেই নয় আমন মৌসুমেও আশানিয়া, দেপা, বিরল, মোটংগা, আশা, গাজী, খামা, দুধজ্বর, বাজলা, মুগি, গুতি, কলামখনিয়া, খুকনিশাইল, কইতাখামা, জোয়ালকোট, মাতিয়ারি, আইকর শাইল, ময়নাশাইল, গোয়াই, মুগবাদল, চেংরামুরি, তেরব আলী, কাচালত, সোনাঝুরি, হাতকড়া, ঘোটক, অগি ঘোটক, চাপরাস, নাগা ঠাকুরভোগ, ময়নামতি, পানিতারং, চাপলাশ, পানিলড়ি, আশকল, পুঁথিবিরণ, ঝরাবাদল, নাপতা, কটকটিয়া, খইয়া আমন, মধুবিরন, মধুবাধব, ফুলমালতি, কলারাজা, খাসিয়াবিন্নি, পুরাবিন্নি, গান্ধি শাইল, হলিনদামেথি, কলাহিরা, গোয়ারচরা, ডেপা খাগা, কলামাকনি, ধলামাকনি, যদুবিরন ধান চাষ হতো। এছাড়া আউশ মৌসুমে কিছু এলাকায় দুমাই, মারকা, বগি, দোয়ালি, মুরালিসহ নানা প্রজাতির দেশি ধান চাষ হতো। কৃষি বিভাগের মতে চলতি বছর হাওরে সিনজেনটা, হীরা-১,২, সুরভি, এসএলএইটএইচ, ময়না ইত্যাদি চাষ হয়েছে বেশি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার লখার হাওরের কৃষক ইকবাল মিয়া বলেন, আগে দেশি ধান চাষ করতাম। এখন আর চাষ করিনা। তবে এই ধানের লাগি আফসোস করি। মনের মধ্যে স্বাদ গেথে আছে এই ধানের চালের সুগন্ধী ভাতের। তিনি বলেন, এই ধান জমিতে ফলন হয় কম। এ কারণে কেউ চাষ করতে চায় না। তবে এই চালের দাম অন্য ধানের চালের চেয়ে দ্বিগুণ। এটা এখন বড়ো লোকেরা খায় বহু দাম দিয়ে। শাল্লার ছায়ার হাওরের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, দেশি ধান হাওরের কাছে এখন স্মৃতির নাম। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রতিনিধত্বকারী এই ধান চাষ অস্বাভাবিক কমে গেছে। তবে বড় লোকের কাছে এই ধানের চালের চাহিদা এখনো রয়ে গেছে। তারা বেশি দামে এই ধানের চাল এখনো কিনে খান। তিনি বলেন, প্রচারণার অভাব ও বিজ্ঞান প্রলোভিত হয়ে কৃষকরা এই ধান চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। শাল্লা উপজেলার মাদারিয়া হাওরের কৃষক নোয়াগাও গ্রামের পীযুষ চন্দ্র দাস বলেন, দেশি ধান চাষ হাওর থেকে ওঠে গেছে বললেই চলে। তবে আমি নিজে খাওয়ার জন্য প্রতি বছর অল্প জমিতে দেশি বোরো ও লালডিঙ্গা ধান চাষ করি। কোনও মতে ধান রোপণ করে চলে আসলেই হয়। আর কোন পরিচর্যা লাগেনা। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকে এই ধান। কেদার প্রতি চাষ হয় ৪-৫ মণ। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, দেশি ধান অস্বাভাবিক কম ফলন হয়। এই তুলনায় হাইব্রীড ধানের ফলন বেশি। যে কারণে কৃষক এখন উফশী ধানের পাশাপাশি হাইব্রীড ধানের দিকে ঝুঁকছে। হাইব্রীড যেখানে ২০-২৩ মন বিঘা প্রতি চাষ হয় সেখানে, দেশি ধান মাত্র ৪-৫ মণ হয়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যেন ডোবা-নালা

লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যেন ডোবা-নালা